স্বৈরাচারী হাসিনার নিযুক্ত বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মো.রুহুল আমিন সহস্রাধিক ক্যাডার নিয়ে গতকাল বায়তুল মোকাররম মসজিদে জোরপূর্বক জুমার নামাজ পড়ার চেষ্টা করলে তুমুল হট্টগোলের মাঝে সাধারণ মুসল্লিদের প্রতিরোধের মুখে তিনি নামাজ পড়ানোর সুযোগ না পেয়ে পালিয়ে গেছেন। হাসিনার দোসর মুফতি রুহুল আমিনের ভাড়াকরা মাদরাসার ছাত্রদের হামলায় বায়তুল মোকাররমের ৪/৫টি দরজার গ্লাস ভাঙচুর এবং ১০/১২জন মুসল্লি আহত হয়েছে। হাসিনার প্রেতাত্মা মুফতি রুহুল আমিন দীর্ঘদিন পালিয়ে থেকে গওহড়ডাঙ্গা থেকে ৫/৬টি বাস যোগে সহস্রাধিক লোকজন নিয়ে বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ পড়াতে এলে সাধারণ মুসল্লিরা ক্ষীপ্ত হয়ে উঠেন। নারায়ণগঞ্জের জালকুড়িস্থ আল মিকাত মাদরাসার মুহতামীম সুলতান আহমেদের নেতৃত্বে তার মাদরাসার শতাধিক ছাত্রও মুফতি রুহুল আমিনের ভাড়া করা ছাত্রদের সাথে বায়তুল মোকাররমে মারামারিতে অংশ নেয়।

ঐতিহাসিক ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর পলাতক থাকা হাসিনার নিযুক্ত বায়তুল মোকাররমের খতিব রুহুল আমিন সহস্রাধিক মাদরাসার ছাত্র নিয়ে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জোরপূর্বক জুমা নামাজ পড়াতে এলে মসজিদের ভেতরে চরম হট্টগোল এবং মারামারির ঘটনা ঘটে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিযুক্ত মুহাদ্দিস মাওলানা আবু ছালেহ পাটোয়ারী মসজিদের মিম্বরে জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান শুরু করলে হাসিনাকে কওমি জননী স্বীকৃতিদাতা খতিব মুফতি রুহুল আমিন সহস্রাধিক লোকজন নিয়ে মসজিদের মিম্বরের কাছে গিয়ে বসেন। এসময়ে একজন মুসল্লি হাসিনার নিযুক্ত খতিব মুফতি রুহুল আমিনকে বয়ান করতে দেয়ার নির্দেশ দিলে হৈ চৈ শুরু হয়। খতিব রুহুল আমিনের লোকজন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিযুক্ত মুহাদ্দিস আবু ছালেহ পাটোয়ারীর হাত ধরে টেনে মিম্বর থেকে নামিয়ে দেয় এবং বলেন, নামুন হুজুরকে বয়ান করার সুযোগ দিন না হয় খারাপ হয়ে যাবে। এসময়ে সাধারণ মুসল্লিরা হাসিনার খতিব রুহুল আমিনকে উদ্দেশ্য করে ভুয়া ভুয়া বলে শ্লোগান দিতে থাকে। খতিব রুহুল আমিন মিম্বরে বসে মুসল্লিদের বারবার শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে জুতার বক্স নিয়ে মারামারি হাতাহাতি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে দরজার গ্লাস ভাঙচুর শুরু হয়। এতে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে হাসিনার নিযুক্ত খতিব মুফতি রুহুল আমিন দলীয় লোকজনের প্রহরায় দ্রুত মসজিদ থেকে পালিয়ে যান। তার সাথে সাথে গওহড়ডাঙ্গা থেকে আগত মাদরাসার ছাত্র শিক্ষক এবং আওয়ামী ক্যাডাররা মসজিদ থেকে নামাজ না পড়েই পালিয়ে যায়। পরে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে এলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিযুক্ত ইমাম মাওলানা আবু ছালেহ পাটোয়ারী জুমার নামাজ পড়ান। খতিব জটিলতায় অনেকটা থমথমে পরিস্থিতিতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে গতকাল জুমার নামাজ আদায় করতে হয়েছে মুসল্লিদের। ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর পলাতক থাকা বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি রুহুল আমিন ফিরে আসার ঘটনায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।

এরপর থমথমে পরিস্থিতিতে নামাজ শেষে সাধারণ মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ দেখা যায় মসজিদ থেকে শ্লোগান দিতে দিতে একদল মুসল্লি বের হন। তারা ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’ বলে শ্লোগান দিচ্ছিলেন। বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা খতিব রুহুল আমিনের সমর্থক দু’জন মাদরাসার ছাত্রকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। এ সময় পুলিশ তাদের মসজিদ এলাকা থেকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু তারা রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ান। পরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্যরা তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেন। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর আমীর মাওলানা মুহাম্মদ হোসাইন আকন্দ এক বিবৃতিতে বলেছেন, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম খতিব মুফতি মাওলানা রুহুল আমীন জুম্মার নামাজের খুৎবার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছিলেন। সাধারণ মুসল্লিদের দাবি তিনি আজ নামাজ পড়াবেন না। কাওমি জননী উপাধি ও নৌকা মার্কায় ভোট চাই ও হাসিনা নিয়োগ দেয়া সাধারণ মানুষ তার পিছনে নামায আদায় করবে না। খতিবের হুজরাখানায় নামাজের আগে সিদ্ধান্ত হয় ছাত্র পাহারায় তিনি সালাত আদায় করবেন। কিন্তু ইসলামী ফাউন্ডেশন নিয়োগ দেয়া ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ আবু ছালেহ আহমদ পাটোয়ারী খুৎবায় চলাকালীন সময়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বয়ানে শুরু করেন মুফতি রুহুল আমিন। এমন সময় সাধারণ মুসল্লিদের প্রতিবাদের মুখে অবশেষে আওয়ামী খতিব রুহুল আমিন পলায়ন করে। আবু সালেহ পাটোয়ারী ইমামতিতে নামাজ আদায় করেন সাধারণ মুসল্লি। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এই ধরনের আওয়ামী লীগের লোকেরা ঢুকে মারামারি ভাঙচুর এবং হামলা করবে তা কারো কাম্য নয়। আমি হাসিনার নিযুক্ত খতিবের এই ধরনের হীনম্মন্যতা সংকীর্ণতা আলেম সমাজের কলঙ্ক তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

বায়তুল মোকাররমে প্রত্যক্ষদর্শী সাধারণ একজন মুসল্লি বলেন, হাসিনার নিয়োগপ্রাপ্ত খতিব রুহুল আমিন গোপালগঞ্জ থেকে ভাড়াকরা ছাত্র এনে বায়তুল মোকাররমে শান্তিপ্রিয় মুসল্লিদের যেভাবে পিটিয়ে গেলো তা’ ভাবতেও অবাক লাগে। সাধারণ মুসল্লিরা যে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন না হয় গতকাল ফ্যাসিবাদী গোপালগঞ্জের ভাড়াটিয়া গুণ্ডাদের লাশের স্তূপ পড়তো। হাসিনাকে কওমি জননী উপাধিদানকারী আলেম নামের কুলাঙ্গার মুফতি রুহুল আমিনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গওহড়ডাঙ্গা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি। না হয় শান্তিপ্রিয় ঢাকাবাসী গওহড়ডাঙ্গা অভিমুখে মার্চ করে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবে। ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই মুসল্লি বলেন, হাসিনা দিল্লীতে পালিয়েছে কিন্তু তার প্রেতাত্মারা এখনো সরব। বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের পিটিয়ে আহত করে ভাঙচুর করে এই বার্তাই দিয়ে গেলো মুফতি রুহুল আমিন। তিনি বলেন, হাসিনার প্রেতাত্মাদের এসব আস্ফালন দেখার জন্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শত শত ছাত্র ও সাধারণ মানুষ শহীদ হয়নি। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনতিবিলম্বে এসব সন্ত্রাসী প্রেতাত্মাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল হলেও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিবের নিয়োগ কেন বাতিল হয়নি তা’ আজও রহস্যাবৃত। তিনি অবিলম্বে খুনি হাসিনার প্রেতাত্মা খতিব মুফতি রুহুল আমিনের নিয়োগ বাতিল এবং বায়তুল মোকাররমের বিতর্কিত অন্যান্য পেশ ইমামদের দ্রুত অপসারণের জোর দাবি জানান। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে হামলা ভাঙচুর এবং আহত হবার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় ইফার পক্ষ থেকে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। খতিব বলেছেন, আমি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই নামাজ পড়াতে এসেছি।

জাতীয় মসজিদে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার নেপথ্যেÑ
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে একের পর এক ঘটনা ঘটছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটি সূত্র জানায়, শুক্রবারে মারামারির মতো ঘটনা ঘটতে পারে এই কথা সবার মুখে মুখে ছিল। বিগত সরকারের আমলে নিয়োজিত খতিব মাওলানার রুহুল আমিন কওমি মাদরাসা থেকে লোক ভাড়া করে নামাজ পড়াতে আসবেন এ কথা প্রায় সবাই জানতেন। কিন্তু কোন পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করেনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল হামিদ জমাদ্দার এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক বশিরুল আলম। তারা কেন নীরব ছিলেন তা এখনো রহস্যাবৃত। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন সময় থেকেই কর্মস্থলে অনুপস্থিত জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা রুহুল আমিন। ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর পালিয়ে যান খতিব রুহুল আমিন। একজন চুক্তিভিত্তিতে নিয়োজিত ব্যক্তি পালিয়ে গেলে তার চুক্তি বাতিল করে দিবে এটি স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু পালিয়ে যাওয়ার এক মাস পরেও কেবলমাত্র একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চুপ থাকেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর মাঝে গোপনে মাদরাসার ছাত্র জোগাড় করতে থাকেন খতিব রুহুল আমিন। ফলশ্রুতিতে কয়েকটি বাস ভাড়া করে সহস্রাধিক মাদরাসা ছাত্র নিয়ে নামাজ পড়াতে সদল বলে হাজির হন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চাওয়া জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন। ফলে জুমার নামাজে সৃষ্টি হয় মারামারির ঘটনা। খতিব রুহুল আমিনের ভাড়া করা লোকদের হামলায় আহত হন বেশকিছু মুসল্লি। রক্তাক্ত হয় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের নামাজের জায়গা। জাতীয় মসজিদে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটবে তা কিছুদিন ধরে অনুমান করা যাচ্ছিল।

কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা সাধারণ মুসল্লিদের নিরাপত্তায় কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি। প্রশাসনিক কাজে অনভিজ্ঞ ধর্ম সচিব ও ইফার ডিজি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইসলামী বই মেলাও শুরু করতে পারেনি। জাতীয় মসজিদে কি হচ্ছে না হচ্ছে সে বিষয়েও তারা উদাসীন। বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররমে ধর্ম উপদেষ্টা মাহফিল করবেন মর্মে নির্ধারিত রয়েছে। এ মাহফিলে কোন শ্রোতা দর্শক-শ্রোতা না থাকায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গণশিক্ষা প্রকল্পের ঢাকা মহানগরীর সব শিক্ষককে মাহফিলে শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন এখনো চালাচ্ছে শেখ হাসিনা সরকারের অনুগত লোকেরা। ধর্ম সচিব আব্দুল হামিদ জমাদ্দার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর সচিব সবাই বিগত সরকারের আমলেই নিয়োজিত। তারা এখনো বিগত সরকারের আমলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। তাদের কথায় চলছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ফলে জাতীয় মসজিদের আজকের এ অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সূত্রপাত। মসজিদ সূত্রে জানিয়েছে, জাতীয় মসজিদে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইসলামী বই মেলা নিয়ে আগুন ধরানোর হুমকি দিয়ে দেওয়া হয়েছে মসজিদের পূর্ব ও দক্ষিণ শাহানে। সবগুলো ঘটনায় ধর্মসচিব এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন ডিজির ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ। গুজব রয়েছে, আরো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলে সবই হবে এই ত্রিরত্নের সম্মিলিত স্যাবোটাজ। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার ইঙ্গিতে গত ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) দিন হাতে গোনা কয়েকটি প্রকাশনার মালিক বায়তুল মোকাররমে উত্তর গেইটে কথিত কর্মসূচি পালন করেছিল। এ বিষয়টি তারা স্বীকার করেছে বলে জানা গেছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে খতিব নেই প্রায় দুই মাস ধরে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর পাঁচ দিন জাতীয় মসজিদের ৩ জন ইমামের সবাই পলাতক ছিলেন। এ সময় পুরো পাঁচ দিন জাতীয় মসজিদে নামাজ পড়ান শার্ট প্যান্ট পরা লোকেরা। ধর্ম সচিব ও ইফা ডিজি নিরব ছিলেন। বিগত সরকারের আমলে অতিমাত্রায় তোষামোদকারী ইমামরা প্রথমে পালিয়ে যান। পরে বিভিন্ন রাজনীতিবিদ এবং কওমি আলেমদের কাছে ধরনা দিয়ে জাতীয় মসজিদে নামাজ পড়াতে আসা শুরু করেন। কিন্তু খতিব রুহুল আমিন থেকে যান পলাতক। এই অবস্থায় দীর্ঘ দুই মাসেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এমতাবস্থায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তা ব্যক্তিদের ব্যর্থতার দায়ভার গোনার সময় এসেছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।